আজকের দিনে দাড়িয়ে হিন্দি গানের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়িকা হলেন নেহা কক্কার। তার ভক্ত নয় এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল। তার গলার আওয়াজে সকলে মুগ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে 72 মিলিয়ন এর বেশি মানুষ ফলো করে। তিনি এখনো অবধি সবচেয়ে তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় গায়িকা।
অনেকে তাকে 'রিমেক কুইন ' বলেন।কারণ অনেক পুরনো গান কে তিনি আবার নতুন করে নিজের আওয়াজে গেয়েছে সাথে নতুন মিউজিক।এই নিয়ে অনেক ভক্ত দের মধ্যে খুশি থাকলেও কিছু মানুষ তাদের অখুশি ও প্রকাশ করেন ।
নেহা কোনো ধনী পরিবার থেকে ছিলেন না খুবই সাধারণ পরিবারের মেয়ে নেহা ।তার বাবা একজন সিঙ্গারা বিক্রেতা ছিলেন। নেহার জন্ম উত্তরাখণ্ড এর ঋষিকেশ এর একটি হিন্দু পরিবারে।১৯৮৮ সালের ৬ জুন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তার বর্তমান বয়স ৩৪ বছর ।নেহার হাইট ৪ফুট ৫ ইঞ্চি ওজন ৪৫ কেজি । উচ্চতায় তিনি পিছিয়ে থাকলেও নিজের সাফল্যের সিঁড়িতে একদমই পিছিয়ে নেই তিনি নিজের কন্ঠ দিয়ে শুধু ভারতেই নয় পুরো বিশ্বে নিজের ভক্ত বানিয়ে নিয়েছে।
নেহার পরিবারে মোট ৫জন । তার বাবা,মা,দিদি,দাদা আর তিনি নিজেই ।তার দিদি সোনু কাক্কার তিনি নিজেও একজন গায়িকা তবে তিনি নিজের সাফল্য ওতো টা অর্জন করতে পারেনি ।আর তার দাদা টোনি কাক্কার উনিও একজন গায়ক তবে তিনি কিছুটা হলেও নেহার মতো নিজের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নেহার জন্ম হয় উত্তরাখণ্ড এর একটি গ্রামে, কিন্তু দারিদ্রতার কারণে পুরো পরিবার সহ দিল্লী তে চলে আসে নেহা তখন মাত্র ১০ বছর এর ছিলেন।তাদের নিজের কোনো বাড়ি ছিলো না ছোট্ট একটা ভাড়া বাড়িতে তারা ৫ জন থাকতেন। নেহার বাবা সিঙ্গাড়া বিক্রি করতেন সাথে আরও অন্য ছোটো খাটো কাজ করতেন একটু বেশি উপার্জনের জন্য। এছাড়া নেহা এবং তার দিদি সোনু যেকোন সামাজিক বা বৈবাহিক অনুষ্ঠানে সারা রাত জেগে গান গাইতেন মাত্র ১০০-১৫০ টাকার বিনিময়ে ।
তাদের পরিবারে সুদিন আসে তখন যখন দিদি সোনু কাক্কার ' দম ' মুভি তে ' বাবুজি যারা ধীরে চলো ' এই গানটি গাওয়ার পর থেকে ।এরপর আস্তে আস্তে তারা বলিউড এ নিজে দের পরিচিতি বানাতে থাকে।এবং নেহা ও নিজের দিদির হাত ধরে বলিউড এ প্রবেশ করার চেষ্টা করেন ।
এরপর ২০০৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নেহা ইন্ডিয়ান আইডল এর কম্পিটিশন এ অডিশন দিয়ে সিলেক্ট হন কিন্তু তার জার্নি টপ ৮ নম্বর এই বাদ পড়ে যান তিনি , এরফলে প্রচন্ড ভাবে মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন তিনি।এরপর ও নেহা হার মানেননি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।এরপর অনেক ছোট বড় স্টেজ শোতে পারফরমেন্স করেন নেহা।
এরপর ২০১০ এ ভারতের বিখ্যাত মিউজিক ডিরেক্টর 'মিট ব্রস' এর নজরে আসে নেহা এবং সেখান থেকে মিউজিক অ্যালবাম এ সুযোগ পান নেহা। এই গানটি গাওয়ার পড়ে সাফল্য পেতে থাকেন তিনি । ইউটিউব ভিডিও করতে থাকেন এবং খুব ভালো ড্যান্সার ও তিনি।
এরপর ২০১২ সালে হানি সিং এর সাথে "সেকেন্ড হ্যান্ড জাওয়ানি " গানটি গেয়ে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং তার ভাগ্য খুলে যায় ।এরপর হানি সিং তাকে দিয়ে আরো একটা গান গাওয়া গানটি হলো "আজ ব্লু হে পানি পানি"গানটি ।এই গানটি ভারত এ খুব জনপ্রিয়তা পায়।এছাড়া ২০১৪ তে বাংলা সিনেমায় গান করেন তিনি।তার সাথে সাথে তার দাদা টোনি কাক্কার ও বলিউড এ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
নেহার গাওয়া হিট গান গুলি হলো "লারকি বিউটি ফুল " ও শাকি শকিরে "তে মেয় তেরা বয়ফ্রেন্ড " "কালা চশমা " "লারকী আখ মারে" কোকা কোলা তু, মিলে হো তুম হামকো , তারও কে শেহের মে আরো অনেক হিট গান গুলি রয়েছে।
বেশ কিছু বছর আগে নেহা রিলেসন এ আসেন অভিনেতা হিমাংশ কহিলির সাথে কিন্তু ছেলেটি শুধু মাত্র একটা অ্যালবাম ভিডিও তে নেহার সাথে কাজ করার লোভেই নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। গানটির নাম 'ও হামসফর '। তার পরেই নেহার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে দেয় হিমন্স। এরই পড়ে নেহা একটা গান গায় " ইসমে তেরা ঘাতা মেরা কুচ নেহি জাতা"।যা ছিল তৎকালীন সোশ্যাল মিডিয়া তে চর্চার বিষয় বস্তু।এরপর নেহা বিয়ে করেন পাঞ্জাবি গায়ক রোহান প্রীত সিং কে আজ তারা সুখী দাম্পত্য জীবনে।
২০০৬ এ যিনি একসময় ইন্ডিয়ান আইডল এর মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আজ তিনি সেই আসরের বিচারক হিসেবে কাজ করছে । একেই বলে ভাগ্য।তাই বলবো সকল কে খেলায় হারজিত থাকবেই তাই বলে খেলা বন্ধ করা যাবে না । লক্ষ্য যদি স্থির থাকে সাফল্য আসবেই আসবে ।নেহা হলো তার জীবন্ত উদাহরণ।