আজ রাস্তার আসেপাসে বাড়ির আনাচে কানাচে একটি বিশেষ উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়। এই বিশেষ উদ্ভিদটির নাম – পার্থেনিয়াম (parthenium) । এটি একটি গুল্ম প্রজাতির সল্প জীবী আগাছা উদ্ভিদ। পার্থেনিয়াম এর বিজ্ঞানসম্মত নাম 'পার্থেনিয়াম হাইড্রোফরাস' (Parthenium hysterophorus)।
পর্থেনীয়াম অনেকের মতে এটি 1956 সালে ভারত যখন দুর্ভিক্ষ ছিল তখন আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয়েছিল খাদ্য শস্য ভারতে, তখন গমের বীজের সাথে এই পার্থেনিয়ামের বীজ এসেছিল ভারতে।
পার্থেনিয়ামকে অনেকে গাজর ঘাস কংগ্রেস ঘাস নামেও পরিচিত। গাজর খাস বলা হয় তার কারণ হলো ছোট অবস্থায় এটিকে গাজর গাছের মতোই দেখতে হয় আর কংগ্রেস ঘাস বলা হয় কারণ যে সময় এটি এসেছিল তখন কংগ্রেসের প্রচুর দাপট ছিল তারা অর্থাৎ কংগ্রেসের কর্মীরা মাথায় সাদা টুপি পড়তো এবং গাছের ফুলগুলো সাদা টুপির মতই হতো তাই এরকম নামকরণে প্রবাদ আছে। কংগ্রেস যেমন দ্রুত সেই সময় ভারতবর্ষে ছড়িয়ে যায় ঠিক তেমনভাবে পার্থেনিয়াম ও ছড়িয়ে যায় তাই এইরকম সমতুল্য নাম রাখা হয়েছিল পার্থেনিয়াম, একটু দেখতে গাজর গাছের মতো হলেও । কিন্তু আসলে গাজর গাছের মতো উপকারী কোন গাছ নয়।
এগুলি সাধারণত বাড়ির আশেপাশে, চাষের জমির পাশে রেল লাইনের ধারে , পার্কে খেলার মাঠে রাস্তার ধারে প্রায়শই দেখা যায়। এতে মারাত্মক রকমের বিষাক্ত একটি গাছ। এটি ভারতবর্ষে জন্ম নয় এর উৎপত্তিস্থল হলো মেক্সিকো। ভারতবর্ষের পাশাপাশি এই গাছটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ,পাকিস্তান, চীন অস্ট্রেলিয়া এবং নানান দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুটা গাছের মতো কিছুটা নানা রকম প্রজাতি ফুলের মত লাগে ।
তবে এই মারাত্মক ক্ষতিকারক আগাছা গাছটি ভারতবর্ষে প্রচুর ভাবে বিস্তার লাভ করেছে যা মানব জীবন এবং চাষের পক্ষে প্রচুর ক্ষতিকারক।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই গাছের উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষতিকর প্রভাব যা প্রাণী জগতে খুবই হানিকর। চাষের জমির সাথে সাথে প্রবল ভাবে দেখা যাচ্ছে l পর্থেনিয়াম চাষের ক্ষতির সাথে সাথে মানব জীবনকেও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
যেখানে যেখানে এই আগাছা দেখা দিয়েছে সেখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে চাষের জমির উর্বরতা প্রচুরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর মানব জীবনে নানান জটিল রোগের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। চাষের জন্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ফসলের প্রচুর ক্ষতি করেছে আসলে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। পার্থেনিয়াম থেকে এক ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিঃসরণ করে এর ফলে টমেটো বেগুন সহ নানান খাদ্যশস্যের বীজ ঝরিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন এটি চাষের জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ (40%) কমে যায়।
পার্থেনিয়াম গাছের প্রধান বিষাক্ত অংশ হল আর ফুলের রেনু যা খুবি সহজে বাতাসের মাদ্ধমে উড়ে বেরায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এবং এই রেনুর বিস্তারের ফলে বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের শ্বাস নালি এবং ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে আমাদের শ্বসনতন্ত্র এর প্রচুর ক্ষতি করে এই আগাছা।এই গাছের প্রভাবে মানুষের নানান রকম জটিল ত্বকের রোগ, হাঁপানি , একজিমা শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং ত্বকের খুব সান্নিধ্যে আসলে ক্যান্সার পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। এই গাছের সংস্পর্শে আসলে জ্বর বদহজম মাথা যন্ত্রণা দেখা দেয়। এই গাছের 10 মিটার দূরত্ব থেকে গাছের ক্ষতিকারক প্রভাব মানব শরীরে পড়তে পারে।
এছাড়া গবাদি পশুর শরীরও প্রবেশ করতে থাকলে চামড়া ফুলে যেতে থাকে এবং তাদের ক্ষেত্রে উৎপত্তি হয় বিভিন্ন রকম জটিল সমস্যা। গবাদি পশু দীর্ঘদিন এটি সংস্পর্শে আসলে দুধ তেতো হয়ে যায়।অর্থাৎ মানুষের ক্ষেত্রে যে সকল জটিল সমস্যা দেখা যেতে থাকে পশুর ক্ষেত্র ও সেরকম হবে।
এই ক্ষতিকর আগাছার ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে কৃষক দের মনে মানব জীবনে এক ক্ষতি করো প্রভাব ফেলেছে নানা রকম রাসায়নিক কীটনাশক দিয়েও এই আগাছার ধ্বংস কোনভাবেই হচ্ছে না। বারংবার এটিকে কেটে ফেলার পরেও আবার দেখা যাচ্ছে নতুন করে নতুন বীজ থেকে নতুন করে উৎপত্তি হচ্ছে। পার্থেনিয়াম ধ্বংস করার নিয়ম হলো: গাছগুলিতে ফুল ফোটার পরে পোড়াবেন না বা মারবেন না। তাতেও কোন লাভ হবে না। গাছগুলিতে ফুল ফোটার আগে মেরে ফেলুন বা পুড়িয়ে দিন তাতে কিছুটা নিস্তার পাওয়া যাবে। গোবরের সাথে এটি কে মিশিয়ে রাখুন পরে সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা চার থেকে পাঁচ লিটার জলে এক কেজি নুন মিশিয়ে ভালো করে মিশে গেলে এটিকে আগাছার ওপরে স্প্রে করে দিন। এর ফলে দু-তিন দিনে গাছটি মারা যাবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে পার্থেনিয়াম হল 'সাইলেন্ট কিলার' তাই যখনই এগুলো পরিষ্কার বা ধ্বংস করার কথা আসবে আমাদের খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই হাত মুখ ভালো করে ঢেকে নিয়ে এবং তা পরিষ্কার হয়ে গেলে। তারপরে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এর ছোট চারা যখনি চোখে পরবে তখনি এই গাছকে উতখাত করবেন। আমদের সকলের আকক প্রচেষ্টায় আমরা আকদিন পার্থেনিয়াম কে নিরমূল করতে পারব।