হিন্দু ধর্ম অনুসারে অন্যান্য পূজার মতোই বিশ্বকর্মা পূজাও অতি ধুমধাম করে পালন করা হয়। আমরা আলোচনা করব,এবার অর্থাৎ ২০২৩ সালের বিশ্বকর্মা পূজা সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ অর্থাৎ রবিবার নাকি ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবারে সঠিক সময়। কিন্তু তার আগে আমরা আলোচনা করব পূজোর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্ব কারিগর দেব বলে পরিচিত বিশ্বকর্মা। আমাদের দেশের বিশেষ বিশেষ আকর্ষণীয় মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠাতা হলেন দেব বিশ্বকাপ। সব ধরনের শিল্পের সাথে যুক্ত কলকারখানা শ্রমিকরা এবং হিন্দু ধর্মবলম্বী সমস্ত শ্রমজীবীরা দেবতা বিশ্বকর্মা কে তাদের ইস্ট দেবতা হিসেবে পুজিত করেন ।বহু কাল ধরে হিন্দুর ধর্মালম্বি বিভিন্ন শ্রমিকরা বিশ্বকর্মা আরাধনা করেন। দৈনন্দিন জীবনে খুব আরম্ভর করে বিশ্বকর্মা পূজো পালিত করা হয় না শিল্প অবস্থার বিরামের জন্য। কিন্তু বছরের একটা দিন বিশেষ ধুমধাম করে বিশ্বকর্মা পূজো পালিত করে।
২০২৩ বিশ্বকর্মা পূজা করার সঠিক দিন হল ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার ২০২৩ বাংলার ৩০ শে ভাদ্র বিকেল পাঁচটা ৫৩ মিনিট নাগাদ। এবং এই পুজোর শুভ সময়ের সমাপ্তি ঘটবে ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলার ৩১ শে ভাদ্র সোমবার তিনটে ২৪ মিনিট নাগাদ। তবে মতানুসারে এ পূজার সঠিক সময় হবে সোমবার ৩১ শে ভাদ্র দুপুর তিনটের আগে।
হিন্দু ধর্ম অনুসারে বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের শিল্পী।এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা ।অতএব আমরা বলতেই পারি বিশ্বকর্মা হলেন এই বিশ্বের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার ।এই বিশ্বকে নবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলে তার নাম বিশ্বকর্মা তিনি দেব শিল্পী নামে তিনি ও পরিচিত।বৃহস্পতির ভগিনী জোকসিদ্ধা দেব বিশ্বকর্মার মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তার পিতা।বিশ্বকর্মা দেবের বাহন হল হাতি ।
হিন্দু ধর্মের সমস্ত দেবদেবীর পুজোর দিনক্ষণ। সময় নির্ঘন্ট নির্ভর করে চন্দ্রের গতির ওপর। কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা দেবের পূজা সময় নির্মিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা দেবের পুজোর সময় সূচিত হয় সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্মাণ করে। যখন সূর্যসিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে। তখন সময় আসে, বিশ্বকর্মা পুজোর।
শুধুমাত্র কলকারখানা বা কোনও শিল্প কাঠামো কেন্দ্রে বিশ্বকর্মা পুজো পালিত হয় না।আমাদের হিন্দু শাস্ত্র মত অনুসারে অনেকের বাড়ি তো বিশ্বকর্মা দেব কে পুজিত করা হয়।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকলে এক স্থানে হয়ে ঘুড়ি ওড়ানোরও রীতি রয়েছে।
এবার আসি দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা সৃষ্ট কিছু অস্ত্রের কথায় মহাদেবের ত্রিশূল হোক কিংবা বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র অশুভ শক্তি বিনাশে বারংবার যেই অস্ত্র নিয়েছে অব্যর্থ ভূমিকা। যা ভগবান বিশ্বকর্মার অনবদ্য সৃষ্টি। ভগবান ব্রহ্মার বর দানে বলিয়ান এক অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ঋষি দধীচির হাড় থেকে তৈরি করেছিলেন বজ্র যা ব্যবহার করা হয়েছিল। দেব বিশ্বকর্মা সৃষ্ট এই বজ্র দাড়াই দেবরাজ ইন্দ্র বিত্তা সুরকে হত্যা করেছিলেন। মৃত্যু দেবতা যমের কাল দন্ড বিশ্বকর্মা সৃষ্ট। মহাভারতের দেবতা কর্ণ যে কবজ পড়েছিলেন তারও নির্মাতা হলেন বিশ্বকর্মা। এছাড়া মহাবীর কর্ণ যে বিজয় ধনুক ব্যবহার করেছিলেন সেটিও বিশ্বকর্মা দ্বারাই সৃষ্ট।
এবার আসি তার স্থাপত্য কৃতি সম্পর্কে। মহাভারতের বর্ণিত হস্তিনাপুর এর প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বকর্মা। এছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদেশে বিশ্বকর্মা তার কর্মক্ষেত্র অতএব দ্বারকা নগরটিও তৈরি করেছিলেন।কিছু বছর আগে আমাদের ভারতবর্ষের সেনাবাহিনীর সাহায্যে সমুদ্রের তলদেশ থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছিল। যমুনার তীরে পান্ডবদের জন্য ইন্দ্রপ্রস্থর নির্মাণ করেছিলেন। ধন দেবতা কুবেরের কাছে কোন বাহন না থাকায় বিশ্বকর্মা তার জন্য পুষ্পক বিমান তৈরি করে দিয়েছিলেন।
যদিও মতানুসারে রাবণ তার কাছ থেকে একটু পরে ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও উল্লেখ্যভাবে বিশ্বকর্মা স্বর্ণলঙ্কাটি তৈরি করেছেন মহাদেব এবং পার্বতীর জন্য কিন্তু পরবর্তীকালে রাহুল সেটি চিনিনা এবং স্বর্ণলঙ্কা তে নিজের জন্য করে নেয়। দেখ বিশ্বকর্মা সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না।